আন্তর্জাতিক

ভারতে সেতু ধ্বসে ষাটেরও অধিক নিহত হয়েছেন

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় গুজরাট রাজ্যে একটি ঝুলন্ত সেতু ধসে কমপক্ষে ৬০জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে, কয়েকশ লোক নদীর পানিতে ডুবে গেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ধ্বসের সময় রবিবার মরবি শহরের মাখু নদীর সেতুতে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ ছিলেন।
মরবি থেকে রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ব্রিজেশ মের্জা জানিয়েছেন ষাট জন মারা গেছে। ৪০০ জনেরও বেশি উদ্ধার করা হয়েছে । উদ্ধার অভিযান চলমান থাকায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

সংসদ সদস্য মোহন কুন্দারিয়া নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে ৬০ জন লোকের প্রাণহানি হয়েছে।

টিভি ফুটেজে কয়েক ডজন লোককে তারের উপর আঁকড়ে থাকা এবং ভেঙে পড়া ব্রিজের বাঁকানো অবশেষ দেখা যায় । এছাড়াও দেখা যায় যে, জরুরি দলগুলি তাদের উদ্ধার করতে লড়াই করছে। কেউ কেউ নদীর তীরে যাওয়ার চেষ্টা করার জন্য ভাঙা কাঠামোর উপরে উঠেছিল, অন্যরা সাঁতরে নিরাপদে চলে গিয়েছিল।
প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে যে সেতুটি তার উপর ভিড় সামলাতে না পারায় ধ্বসে পড়েছে।

২৩০ মিটার দীর্ঘ এই ঐতিহাসিক সেতুটি উনিশ শতকে ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল। বিগত ছয় মাস ধরে এটি সংস্কারের জন্য বন্ধ ছিল এবং গত সপ্তাহে জনসাধারণের জন্য আবার খুলে দেওয়া হয়েছিল।

সেতুটি গুজরাটের প্রধান শহর আহমেদাবাদ থেকে ২০০ কিলোমিটার (১২০ মাইল) পশ্চিমে মরবিতে অবস্থিত।
আহমেদাবাদের সাংবাদিক ভার্গব পারিখ জানান, ধর্মীয় ছুটির কারণে অনেক পর্যটক গুজরাটে ছিলেন। সেতুটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত । উৎসব মুখর মৌসুমে যখন দিপাবলী এবং ছট পূজা উদযাপন করা হয় তখন সেতুটি দেখতে অনেক দর্শনার্থী ভিড় জমায়।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে যে সেতুটি অতিক্রম করার সময় তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন করছিলেন।

আরেকজন সাংবাদিক হারেশ ঢালা বলেন, সেতুটি মাত্র ১.২ মিটার (৪ ফুট) চওড়া এবং এটি আবার আনুষ্ঠানিকভাবে খোলার জন্য অনুমোদন নাও পেতে পারে।
এই সেতুর বয়স প্রায় ১৫০বছর। গত দুই বছর ধরে এটি জনসাধারণের জন্য বন্ধ ছিল কারণ এটি জরাজীর্ণ এবং সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দাবি করছেন, “কার্যরত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খোলার আনুষ্ঠানিক অনুমতি নেয়নি। তিনি একটি বৈধ প্রত্যয়নপত্র ছাড়া অর্থ উপার্জন করার জন্য তাড়াহুড়োয় ছিলেন।“

ঘটনার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিন দিনের সফরে তার নিজ রাজ্য গুজরাটে ছিলেন।
তিনি উদ্ধার অভিযানের জন্য জরুরীভাবে দল গঠনের দাবি জানিয়েছেন। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে এবং অবিচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বলেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে বলেছেন।

সেতু সহ পুরানো দালানের দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের কারণে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা ভারতে অতি সাধারণ একটি বিষয়।
২০১৬ সালে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় শহর কলকাতার একটি ব্যস্ত রাস্তায় একটি ফ্লাইওভার ধ্বসে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এ ঘটনার এক সপ্তাহেরও কম সময় পরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশে একটি নদীর উপর একটি ফুটব্রিজ ধ্বসে ৩০ জন নিহত হয়।
২০০৬ সালে পূর্বাঞ্চলীয় আরেকটি রাজ্য বিহারের রেলওয়ে স্টেশনে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের উপর ১৫০ বছরের পুরনো একটি সেতু ভেঙে পড়লে কমপক্ষে ৩৪ জন মারা যায়।

Related Articles